বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর।
যোগাযোগ ডেস্ক :
‘মরণ রে, তুঁহু মম শ্যাম সমান। মেঘবরণ তুঝ, মেঘ জটাজুট! রক্তকমলকর, রক্ত-অধরপুট, তাপ বিমোচন করুণ কোর তব মৃত্যু-অমৃত করে দান।’ শুধু জীবনের জয়গানই গেয়ে যাননি, বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর এভাবেই মৃত্যুরও বন্দনা করে গেছেন। আজ ২২ শ্রাবণ, বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ৭৯তম প্রয়াণ দিবস।
কবি জীবনের শেষ নববর্ষ কাটিয়েছেন তার নিজ হাতে গড়া শান্তি নিকেতনে। ১৯৪১ সালের ২৫ জুলাই, শান্তি নিকেতনের আশ্রম বালক-বালিকাদের ভোরের সংগীত অর্ঘ তিনি গ্রহণ করেন তার উদয়ন গৃহের আগের জানালার কাছে বসে। উদয়নের প্রবেশদ্বার থেকে ছেলেমেয়েরা গেয়ে ওঠেন কবিরই লেখা ‘এদিন আজি কোন ঘরে গো খুলে দিল দ্বার, আজি প্রাতে সূর্য ওঠা সফল হল আজ’। রবীন্দ্র জীবনিকার প্রভাত কুমার মুখোপাধ্যায় ‘রবীন্দ্র জীবন কথা’য় কবির মৃত্যু নিয়ে লিখেছেন। তিনি লেখেন ‘শান্তি নিকেতনে কবি এর মধ্যে অসুস্থ হয়ে পড়েন। দেহ আর চলছিল না। চিকিৎসাসেবারও ত্রুটি নেই। অবশেষে ডাক্তাররা পরামর্শ করে ঠিক করলেন, অপারেশন ছাড়া উপায় নেই। ৯ শ্রাবণ (২৫ জুলাই) শান্তি নিকেতন থেকে কবিকে কলকাতায় নিয়ে যাওয়া হলো। শান্তি নিকেতনের সঙ্গে ৭০ বছরের স্মৃতিজড়িত। কবি কি বুঝতে পেরেছিলেন এই তার শেষ যাত্রা? যাওয়ার সময় চোখে রুমাল দিচ্ছেন দেখা গেছে। ৩০ জুলাই, জোড়াসাঁকোর বাড়িতে কবির শরীরে অস্ত্রোপাচার হলো। তার কিছু আগে শেষ কবিতা রচনা করেন ‘তোমার সৃষ্টির পথ রেখেছো আকীর্ণ করি, বিচিত্র ছলনাজালে হে ছলনাময়ী।’
চিকিৎসকরা অস্ত্রোপাচার করলেন তা নিষ্ফল হয়। অবস্থা দ্রুত মন্দের দিকে যেতে লাগল। জ্ঞান হারালেন। শেষ নিঃশ্বাস পড়ল, রাখীপূর্ণিমার দিন মধ্যাহ্নে, বাংলা ১৩৪৮ সালের ২২ শ্রাবণ, ইংরেজি ১৯৪১ সালের ৭ আগস্ট তারিখ কবি চলে গেলেন অমৃতলোকে। কবির জীবনেও বাইশে শ্রাবণ একটি মৃত্যুর দিন। কবির সবচেয়ে প্রিয় দৌহিত্র নীতিন্দ্রনাথের আকস্মিক মৃত্যুসংবাদ ছিল সেই বাইশে শ্রাবণের দিনে।
যদিও এ মৃত্যু প্রথম নয়। এর আগে শোকের ঝড়ে উৎসবের প্রদীপ নিভে গেছে বারবার। আগেই দুই মেয়ে বেলা এবং রেনু অকালে মারা গিয়েছিলেন। আর মাত্র চৌদ্দ বছর বয়সে মৃত্যু ঘটে তার মায়ের।
মা সারদা দেবী ছিলেন নিষ্ঠাবতী বৈষ্ণবী, ধর্মমতী। সাত বছর বয়সে সাত পাকে বাঁধা পড়েন। বাবা দেবেন্দ্রনাথের বয়স তখন সতেরো। অল্পবয়সেই প্রথম সন্তানের জননী। তারপর একে একে পনেরোটি সন্তানের গর্ভধারিণী মা সারদা।
রবীন্দ্রনাথের বিয়ের দিনে মারা যান দিদি সৌদামিনীর স্বামী সারদা প্রসাদ। বিয়ের মাত্র চার মাসের মাথায় তার নতুন বৌঠান, জ্যোতিরিন্দ্র নাথের রূপবতী স্ত্রী কাদম্বরী দেবী আত্মহত্যা করেন।
মাত্র আটাশ বছর বয়সে কবিপত্নীরও মৃত্যু হয়। ১৯০১ সালে বড় মেয়ে বেলা, তার বিয়ের অল্প কিছুদিন পরই মারা যায়। এরপর চলে যায় সেজো মেয়ে রেনু। বাকি থাকে মেয়ে মীরা। মীরার একমাত্র পুত্র নীতিন্দ্রনাথ মাত্র কুড়ি বছর বয়সে বিলেতে পড়ালেখা করতে যান। সেখানেই যক্ষ্মায় আক্রান্ত হন। ২২ শ্রাবণ কবির প্রিয় দৌহিদ্র চলে যান পৃথিবীর মায়া ত্যাগ করে।