সংসদের তিন উপনির্বাচনের পর পৌরসভা, আগামী বছর ইউপি, ফের নির্বাচনের ধারায় ইসি

IC9.jpg

বিশেষ প্রতিবেদক ::

করোনার কারণে গত সাড়ে তিন মাস ধরে সব ধরনের নির্বাচনী কার্যক্রম বন্ধ ছিল। এরপর সংক্ষিপ্ত পরিসরে গত জুলাই থেকেই বগুড়া ও যশোর উপনির্বাচনের মাধ্যমে এই কার্যক্রম শুরু হয়েছে। দীর্ঘ বিরতির পর আবারও নির্বাচনের ধারায় ফিরছে ইসি। ইতোমধ্যে আরও তিন উপনির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করা হয়েছে। ইসি সূত্রে জানা গেছে, উপনির্বাচনের পরপরই পৌরসভা এবং আগামী বছর থেকে ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনের দিকে নজর দিচ্ছে তারা। এসব নির্বাচন যথাসময়ে অনুষ্ঠানের বিষয়টি ইসির মাথায় নিয়ে কাজ শুরু করছে। এরই ধারাবাহিকতায় এ বছরের শেষের দিকে পৌরসভা নির্বাচনের প্রস্তুতিও রয়েছে তাদের।

পৌরসভা নির্বাচনের পাশাপাশি আগামী বছরের মার্চ থেকে সারাদেশে সাড়ে চার হাজার ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনের বিষয়টিও ইসির মাথায় রয়েছে। জানা গেছে, মার্চ থেকে পর্যায়ক্রমে বিভাগ ওয়ারি ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন পরিচালনা করা হবে। সর্বশেষ ২০১৬ সালের মার্চ থেকে দেশে কয়েক দফায় ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। আইন অনুযায়ী ইউনিয়ন পরিষদেরও মেয়াদ শেষ হওয়ার পূর্ববর্তী ১৮০ দিনের মধ্যেই নির্বাচন পরিচালনার বিধান রয়েছে।

করোনার কারণে স্থানীয় সরকারের স্থগিত নির্বাচন এবং অপসারণ, পদত্যাগ, মৃত্যু ও মেয়াদ শেষ হওয়ার কারণে নির্বাচন উপযোগী জেলা, উপজেলা, পৌরসভা ও ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচন অক্টোবর থেকেই শুরুর সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। করোনা মহামারীর কারণে স্থানীয় সরকারের এসব প্রতিষ্ঠানের প্রায় ২৪৭ পদের নির্বাচন আটকে আছে। এছাড়া পৌরসভা, ইউনিয়ন পরিষদ এবং জেলা পরিষদের সাধারণ নির্বাচন ঘনিয়ে আসছে। নবেম্বর থেকে মেয়াদ শেষ হয়ে আসা এসব নির্বাচনের কার্যক্রম শুরু করে বলে জানা গেছে। ইসি সচিব মোঃ আলমগীর জানিয়েছেন, নবেম্বর থেকে সব নির্বাচন যথা নিয়মে অনুষ্ঠিত হবে। আর কোন ভোট স্থগিত করা হবে না। যখন যে নির্বাচন সামনে আসবে সেটা যথাসময়ে আয়োজন করা হবে।

দেশে গত ৮ মার্চ থেকে প্রথম করোনা সংক্রমণ শুরু হয়। এরপর থেকে এই ভাইরাস উত্তরোত্তর বাড়তে থাকে। যদিও এখনও সংক্রমণের হাত রেহাই পায়নি দেশ। প্রতিদিন আক্রান্ত ও মৃত্যুর হার বাড়ছে। কিন্তু করোনা নিয়ে মানুষের মধ্যে ভয়ভীতি কেটে যাওয়ায় পরিস্থিতি স্বাভাবিক হতে শুরু করেছে। প্রথমদিকে এটা নিয়ে যতটা আতঙ্কজনক পরিস্থিতি ছিল তা অনেকাংশে নেই বললেই চলে। সবকিছু স্বাভাবিক হয়ে আসার সঙ্গে ইসির কার্যক্রমও ইতোমধ্যে স্বাভাবিক গতিতে ফিরেছে। স্থানীয় সরকার পরিষদ নির্বাচন আইন সংশোধন, গণপ্রতিনিধিত্ব অধ্যাদেশকে আইনের পরিণত করা এবং রাজনৈতিক দলের নিবন্ধন আইন প্রণয়ন নিয়েও ইসিতে কাজ চলছে। পাশাপাশি ইসির বৈঠকে আগামী নির্বাচন পরিচালনা নিয়েও আলোচনা চলছে।

গত ২১ মার্চ ঢাকা ১০ আসনের পাশাপাশি গাইবান্ধা-৩ ও বাগেরহাট-৪ আসনের শূন্য আসনে উপনির্বাচনে ভোট গ্রহণ করা হয়। এরপর করোনার কারণে সব ধরনের নির্বাচন স্থগিত রাখা হয়। বিশেষ করে ওইমাসের ২৯ তারিখে বগুড়া ও যশোর একটি আসনের উপনির্বাচন এবং চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে ভোট গ্রহণের জন্য তারিখ নির্ধারিত ছিল। করোনা ভীতির কারণে ওইসব নির্বাচন স্থগিত করা হয়। ফলে নির্ধারিত মেয়াদে এসব নির্বাচন অনুষ্ঠান করা সম্ভব হয়নি। সাংবিধানিক বিধান মেনে নির্ধারিত মেয়াদের পরবর্তী ৯০ দিনের মেয়াদে গত ১৪ জুলাই বগুড়া এবং যশোর উপনির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে।

এছাড়া পাবনা-৪, ঢাকা-৫ ও নওগাঁ-৬ আসনের উপনির্বাচনের জন্য তফসিল ঘোষণা করা হয়েছে। তফসিলে অনুযায়ী পবনা-৪ আসনের উপনির্বাচন ২৬ সেপ্টেম্বরে অনুষ্ঠিত হবে। ইতোমধ্যে এই আসনের নির্বাচনের জন্য মনোনয়নপত্র জমার কাজ চলছে। তবে ঢাকার-৫ এবং নওগাঁ-৬ আসনের নির্বাচনের দিনক্ষণ ঘোষণা করা হলেও এখনও মনোনয়নপত্র জমার বিস্তারিত তফসিল দেয়া হয়নি। আগামী ১৭ অক্টোবর ঢাকা-৫ ও নওগাঁ-৬ আসনের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। ইসির পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে ঢাকা-১৮ এবং সিরাজগঞ্জ-১ আসনের উপনির্বাচন নির্ধারিত মেয়াদের পরবর্তী ৯০ দিনের মধ্যে নির্বাচনের জন্য প্রজ্ঞাপন দেয়া হবে।

শুধু উপনির্বাচন নয় সারাদেশে একযোগে প্রায় আড়াই শ’ পৌরসভা নির্বাচনেরও প্রস্তুতি রয়েছে ইসির। আগামী ডিসেম্বরে এই নির্বাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছে তারা। গত রবিবার সারাদেশের পৌরসভা নির্বাচনের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে ইসি সচিবালয়কে নির্দেশনা দিয়েছে কমিশন। আগামী নবেম্বর-ডিসেম্বরে সাধারণ নির্বাচন আয়োজনে নীতিগত সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে বলে জানা গেছে।

নির্বাচনের জন্য পৌরসভাগুলোর বর্তমান জনপ্রতিনিধিদের মেয়াদ, নির্বাচন আয়োজনে কোন জটিলতা আছে কিনা এসব সার্বিক তথ্য চেয়ে ইতোমধ্যে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়কে চিঠি দেয়ার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। এছাড়াও কমিশনের পক্ষ থেকেও মাঠ প্রশাসনের মাধ্যমে পৌরসভাগুলোর মেয়াদসহ অন্যান্য তথ্য সংগ্রহ করছে তারা।

আইন অনুযায়ী, পৌরসভার মেয়াদ শেষ হওয়ার আগের ১৮০ দিনের মধ্যে ভোট গ্রহণের বাধ্যবাধকতা রয়েছে। তাই যেসব পৌরসভার মেয়াদ শেষ হতে যাচ্ছে, সেগুলোতে নবেম্বরের মাঝামাঝি থেকে ফেব্রুয়ারির মধ্যে ভোট করতে হবে। সর্বশেষ ২০১৫ সালের ৩০ ডিসেম্বর একযোগে সারাদেশে ২৩৪টি পৌরসভার ভোট গ্রহণ করা হয়।

এই ইসির সময়েই নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশন এবং রংপুর সিটি কর্পোরেশন এবং সারাদেশে জেলা পরিষদের সাধারণ নির্বাচন করতে হবে। ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারি নাগাদ বর্তমান ইসির মেয়াদ রয়েছে। এরপর নতুন ইসির গঠিত হলে তাদের অধীনে পরবর্তী নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। ২০১৭ সালের ফেব্রুয়ারি ৬ তারিখে সিইসির নুরুল হুদার নেতৃত্বে বর্তমান কমিশন গঠিত হয়।

 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

scroll to top