রোহিঙ্গাদের অবশ্যই তাদের দেশে ফিরে যেতে হবে: প্রধানমন্ত্রী

pm.jpg

বিশেষ প্রতিবেদক ::

বিপুল সংখ্যক রোহিঙ্গারা বাংলাদেশে আসার পর ইতোমধ্যেই তিন বছর পার হয়ে গেছে এবং তাদের অবশ্যই  তাদের দেশে ফিরে যেতে হবে। আমি মনে করি তুরস্ক এ ব্যাপারে ভূমিকা পালন করতে পারে। প্রধানমন্ত্রী সোমবার বিকেলে আঙ্কারায় নব নির্মিত বাংলাদেশ চ্যান্সেরি (দূতাবাস) কমপ্লেক্সের ভার্চুয়ালি উদ্বোধনকালে এ কথা বলেন।

প্রধানমন্ত্রী  শেখ হাসিনা তাঁর সরকারি বাসভবন গণভবন থেকে ভার্চুয়ালি এবং বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন ও তুরস্কের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মেভলুৎ চাভুসগলু তুরস্কের রাজধানী আঙ্কারার ওই কমপ্লেক্সে উপস্থিত ছিলেন।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশ ও তুরস্কের সম্পর্কের শিকড় ইতিহাস, বিশ্বাস ও ঐতিহ্য এবং পরস্পারিক আস্থার ভিত্তিতে অনেক গভীরে প্রোথিত। বাংলাদেশ তুরস্কের সঙ্গে দু’দেশের পারস্পারিক স্বার্থে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক জোরদারে আগ্রহী উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘বাংলাদেশ তুরস্কের সঙ্গে বিদ্যমান সম্পর্ককে অত্যন্ত গুরুত্ব দেয়। তাই, আমরা দু’দেশের জনগণের স্বার্থে এই সম্পর্ককে আরো এগিয়ে নিয়ে যেতে চাই।’

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রায় ৫০ বছর আগে ১৯৭৪ সালে দু’দেশের মধ্যে কূটনৈতিক সম্পর্ক স্থাপিত হয় বলে উল্লেখ করেন। এ প্রসঙ্গে তিনি আরো বলেন, যদিও তুর্কী সেনাপতি ইখতিয়ার উদ্দিন মুহাম্মদ বখতিয়ার খিলজীর ১৩ শতকে বাংলা জয়ের ফলে দু’দেশের মধ্যে সম্পর্ক আরো অনেক আগেই স্থাপিত হয়।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমাদের এই ঐতিহাসিক সম্পর্ক উদযাপন অনুষ্ঠানে, আমি ২০১২ সালের ১৩ এপ্রিল তুরস্কের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ও বর্তমান প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইপ এরদোগানের আমন্ত্রণে আঙ্কারা সফরের কথা উৎফুল্ল চিত্তে স্মরণ করছি।’

সর্বকালের শ্রেষ্ঠ বাঙালী জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, জাতির পিতা শুধু একটি সমৃদ্ধ বাংলাদেশেরই স্বপ্ন দেখেননি। তাঁর স্বপ্ন ছিল একটি ক্ষুধা, দারিদ্র্য ও সংঘাতমুক্ত বিশ্ব। তিনি বলেন, ‘আমি আঙ্কারায় এই নতুন দূতাবাস কমপ্লেক্সটি ভার্চুয়ালি উদ্বোধন করতে পেরে অত্যন্ত আনন্দিত। নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যেই প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হওয়ায় আমি খুশি।’

প্রধানমন্ত্রী চলমান রোহিঙ্গা সংকটকালে সহযোগিতার হাত সম্প্রসারিত করায় তুরস্ক সরকারকে ধন্যবাদ জানান এবং ভবিষ্যতে এই সংকট সমাধানে আরো সহযোগিতার আহ্বান জানান।

শেখ হাসিনা বলেন, রূপকল্প ২০২১ ও ২০৪১ অর্জনে বাংলাদেশ বিশ্বব্যাপী আরো অনেকগুলো কূটনৈতিক অফিস স্থাপন করছে, আর এর মাধ্যমে বর্হিবিশ্বের সাথে যোগাযোগ বাড়াচ্ছে। তিনি বলেন, ‘আঙ্কারায় এই স্থায়ী দূতাবাস কমপ্লেক্স তুরস্কের সাথে বিদ্যমান বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক আরো জোরদারে বাংলাদেশ যে অগ্রাধিকার দিচ্ছে, তার প্রমাণ। ঢাকায় সম্প্রতি নির্মিত তুর্কী দূতাবাসও বাংলাদেশের সাথে সম্পর্ক জোরদারে তুরস্কের আগ্রহের প্রমাণ।’

তিনি বলেন, ‘আমি আশা করছি, চলমান মুজিব বর্ষে প্রেসিডেন্ট এরদোগানের সদয় উপস্থিতিতে শিগগিরই ঢাকায় আনুষ্ঠানিকভাবে তুরস্কের দূতাবাস ভবনের উদ্বোধন করা হবে।’

প্রধানমন্ত্রী উল্লেখ করেন যে, বাংলাদেশের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ ও তুরস্কের সহায়তায় বাংলাদেশ দূতাবাসের এই কমপ্লেক্সটির নির্মাণ সম্পন্ন করতে দুই বছরেরও কম সময় লেগেছে। দূতাবাস কমপ্লেক্সে লাল রঙের ইট বাংলাদেশী স্থাপত্য ও ঐতিহ্যের স্বতন্ত্র বৈশ্বিষ্ট্যকে তুলে ধরবে। এই ভবনটি অত্যন্ত গর্বের সাথে বাংলাদেশের জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের একটি আবক্ষ ভাস্কর্য ও একটি শহীদ মিনার ধারণ করে আছে উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, তিনি এটা জানতে পেরে খুব খুশি যে এই কমপ্লেক্সে চমৎকার একটি মিলনায়তনসহ সব ধরনের সুবিধা রয়েছে।

আঙ্কারায় বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত এম আল্লামা সিদ্দিকী অনুষ্ঠানে স্বাগত ভাষণ দেন। এ উপলক্ষে চ্যান্সেরি কমপ্লেক্সের ওপর একটি তথ্যচিত্র প্রদর্শিত হয়।

পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী মো. শাহরিয়ার আলম, প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব ড. আহমদ কায়কাউস, প্রেস সচিব ইহসানুল করিম, আওয়ামী লীগের প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক আবদুস সোবহান গোলাপ গণভবন প্রান্তে উপস্থিত ছিলেন। ’খবর: বাসস।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

scroll to top