খালেদার চিকিৎসা : কী ভাবছে বিএনপি?

Khaleda.jpg

খালেদা জিয়া (ফাইল ছবি)

সীমান্ত চৌধুরী :

বিএনপি চেয়ারম্যান খালেদা জিয়ার মুক্তি আন্দোলনে বিএনপির রাজনৈতিক ব্যর্থতায় পরিবারের উদ্যোগে ও প্রধানমন্ত্রীর দয়ায় সরকারের নির্বাহী আদেশে সাজা স্থগিত করে চিকিৎসার জন্য শর্ত সাপেক্ষে ৬ মাসের সাজা স্থগিত করে জামিন পাওয়া সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও বিএনপি চেয়ারম্যান খালেদা জিয়া। বিএনপি চেয়ারম্যান খালেদা জিয়ার চিকিৎসা নিয়ে বিএনপি বা পরিবার এখন কি ভাবছে?

উন্নত চিকিৎসার জন্য বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে গত ২৫ মার্চ  ৬মাসের সাজা স্থগিত করে দেয়া হয়। সাজা স্থগিতের জামিনের ৫ মাস শেষ হবে আগামী ২৫ আগস্ট। খালেদা জিয়ার চিকিৎসা নিয়ে বিএনপি বা পরিবার কি উদ্যোগ নিচ্ছে জানে না বিএনপি কর্মীরা বা জনগণ।

বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার উন্নত চিকিৎসার জন্ বিদেশ যাওয়া নির্ভর করছে সরকারের সিদ্ধান্ত ও করোনা পরিস্থিতির ওপর। একই সঙ্গে বিদেশ যাওয়ার বিষয়ে তার নিজের সিদ্ধান্তের বিষয়ও আছে। তবে তার চিকিৎসকরা বলছেন, বর্তমানে খালেদা জিয়ার যে শারীরিক অবস্থা, তাতে দেশে উন্নত চিকিৎসা সম্ভব নয়, বিদেশেই চিকিৎসা নিতে হবে। জানা গেছে, বিদেশে চিকিৎসার ব্যাপারে সরকারের কাছে শিগগিরই আবেদন করা হতে পারে পরিবাবের পক্ষ থেকে। সাজা স্থগিতের মেয়াদ বৃদ্ধি ও বিদেশ যাওয়ার অনুমতি এক সাথে আবেদন করবে খালেদা জিয়ার পরিবার। এদিকে সরকারের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, সাজা স্থগিতের মেয়াদ বৃদ্ধির এবং বিদেশে যাওয়ার আবেদন পাওয়ার পর এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।

খালেদা জিয়ার চিকিৎসকরা বলছেন, ‘তার শরীরের অবস্থা আগে যেমন ছিল, এখনও তেমনই আছে। নতুন করে কোনও সমস্যা সৃষ্টি হয়নি। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালে খালেদা জিয়ার সর্বশেষ স্বাস্থ্যের প্রতিবেদনে বলা হয়েছিল তার “অ্যাডভান্স ট্রিটমেন্ট” প্রয়োজন, তার জন্য “অ্যাডভান্স সেন্টার” লাগবে। আর বাংলাদেশে যদি অ্যাডভান্স ট্রিটমেন্ট এবং অ্যাডভান্স সেন্টার থাকতো তাহলে মানুষকে এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে করে বিদেশে নেওয়া লাগতো না। তাই খালেদা জিয়াকেও অ্যাডভান্স ট্রিটমেন্ট জন্য বিদেশে যেতে হবে। তাছাড়া তার হাঁটু, হাত, পা ও চোখের চিকিৎসা হয়েছিল যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য ও সৌদি আরবের রিয়াদে। তাহলে এখন সেই চিকিৎসা কীভাবে দেশে সম্ভব?’

খালেদা জিয়ার চিকিৎসক ও বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান ডা. এজেডএম জাহিদ হোসেন মিডিয়াকে বলেন, ‘ম্যাডামের আগের হাঁটু, হাত, পা ও ডায়াবেটিসের সমস্যা ছিল। এখনও সেই সমস্যা আছে। তিনি এখনও হাঁটতে পারেন না, নিজের পানিও নিজে নিয়ে খেতে পারেন না। তার আধুনিক চিকিৎসার প্রয়োজন। সেটা বিএসএমএমইউর সর্বশেষ স্বাস্থ্যের প্রতিবেদনেও বলা হয়। এখন তা বাংলাদেশে সম্ভব কিনা সবাই জানে।’ এ বিষয়ে খালেদা জিয়ার আরেক চিকিৎসক ও পরিবারের সদস্য ডা. মামুন কোনও মন্তব্য করতে রাজি হননি।

বিএনপির নেতারা বলছেন, ‘খালেদা জিয়ার পরিবার, দলের নেতা ও চিকিৎসকরা চান তিনি বিদেশে চিকিৎসা গ্রহণ করুন। কিন্তু বিদেশে যাওয়ার বিষয়ে তিনি এখন পর্যন্ত কোনও কথা বা কোনও সিদ্ধান্তের বিষয়ে বলেননি। তবে রোগী হিসেবে নিশ্চয় তিনিও চাইবেন উন্নত চিকিৎসা। আর উন্নত চিকিৎসা গ্রহণ করতে হলে তাকে বিদেশেই যেতে হবে। ফলে, পরিবার যেহেতু তার বিদেশে চিকিৎসা করাতে চায়, এখন সরকারের পক্ষ থেকে অনুমতি পাওয়া এবং করোনা পরিস্থিতির ওপর নির্ভর করছে তার যাওয়ার বিষয়টি।

চলতি বছরের ২৫ মার্চ সরকারের নির্বাহী আদেশে সাজা স্থগিত করে ৬ মাসের মুক্তি পাওয়ার পর থেকে গুলশানের বাসভবন ফিরোজাতেই আছেন খালেদা জিয়া। নিজ বাসায় থেকে চিকিৎসা নেবেন এবং দেশের বাইরে যেতে পারবেন না–এই দুই শর্তে সরকার তাকে মুক্তি দিয়েছিল। আগামী ২৪ সেপ্টেম্বর তার মুক্তির মেয়াদ শেষ হবে।

খালেদা জিয়ার আইনজীবীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, সেপ্টেম্বরের দ্বিতীয় সপ্তাহে খালেদা জিয়ার সাজা স্থগিতের মেয়াদ বাড়ানোর জন্য স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে আবেদন করা হবে পরিবারের পক্ষ থেকে। তবে সেই সঙ্গে বিদেশে চিকিৎসা নিতে সরকারের অনুমতির জন্য আবেদন করা হবে কিনা সেটা এখনও স্পষ্ট করেনি তার পরিবার। এই মাসের মধ্যে লন্ডনে অবস্থানরত বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান ও তার স্ত্রী জোবায়দা রহমানের সঙ্গে আলোচনা এবং করোনা পরিস্থিতি পর্যালোচনা করে সিদ্ধান্ত নিতে পারেন পরিবারের সদস্যরা।

খালেদা জিয়ার আইনজীবী ও বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট খোন্দকার মাহবুব হোসেন বলেন, ‘যখন ম্যাডাম বের হন তখন আইনজীবী ও রাজনীতিকদের কোনও ভূমিকা ছিল না। তার আত্মীয়রা স্বাস্থ্যের বিষয়টি দেখিয়ে মুক্তির আবেদন করেছে, সরকারও মানবিকভাবে তা গ্রহণ করেছে। মুক্তির মূল উদ্দেশ্য ছিল, ভালো চিকিৎসা। কিন্তু সেই চিকিৎসার সুযোগ হয়নি করোনার কারণে। এখন তার পরিবার থেকে স্বাভাবিকভাবে আবেদন করা হবে এবং সরকার সেটাকে ইতিবাচক হিসেবে গ্রহণ করবে বলে আমি বিশ্বাস করি।’

তিনি আরও বলেন, ‘প্রথমবার যে কারণে তার সাজা স্থগিত করা হয়েছে, একই কারণ এখনও বহাল আছে। এখনও যদি তার সাজা স্থগিতের মেয়াদ বৃদ্ধি করা হয়, তাহলে সেখানে কারণ হিসেবে হয়তো এটাই বলা হবে যে, করোনার কারণে তিনি (খালেদা জিয়া) বিদেশে যেতে পারেননি, অথবা তার ইচ্ছা অনুযায়ী চিকিৎসা গ্রহণ করতে পারেননি, সেই সুযোগের জন্য এটি করা হলো।’

আবেদনটি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে পাঠাতে হবে উল্লেখ করে খোন্দকার মাহবুব হোসেন বলেন, ‘এরপর এটিতে আইন মন্ত্রণালয় মতামত দেবে। মুক্তি দেওয়ার বিষয়টি স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ও সরকারের এখতিয়ার। সরকার চাইলে নির্বাহী আদেশে তাকে মুক্তি দিয়ে বিদেশে চিকিৎসা নেওয়ার অনুমতি দেওয়া হতে পারে।’

এ বিষয়ে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বলেন, ‘আগে তারা আবেদন করুন। তারপর আবেদনটি দেখে আমরা সিদ্ধান্ত নেবো, সেটি গ্রহণ করবো নাকি করবো না। আর নির্বাহী আদেশে কারামুক্ত থাকা অবস্থায় তার বিদেশে চিকিৎসা বা অন্য কোনও কাজে যাওয়ার সুযোগ নেই। কেননা, নির্বাহী আদেশে তাকে দেশে বসেই চিকিৎসা নেওয়ার শর্ত দেওয়া ছিল।’

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

scroll to top