নিউজ ডেস্কঃ
মুক্তিযুদ্ধের নয় মাস ধরে পাকিস্তান সেনাবাহিনী ও তাদের এদেশীয় দোসরেরা এ দেশের মানুষের ওপর যে গণহত্যা ও নৃশংসতা চালিয়েছে, তার নজির ইতিহাসে খুব বেশি নেই। কিন্তু সেই নয় মাসের নৃশংসতা ছাপিয়ে গেছে যে মর্মান্তিক ঘটনা, তা হলো বিজয়ের প্রাক্কালে দেশের শ্রেষ্ঠ সন্তানদের হত্যা করা। পাকিস্তান সেনাবাহিনী এবং রাজাকার, আলবদর ও আলশামস বাহিনীর সদস্যরা রাতের অন্ধকারে লেখক-বুদ্ধিজীবী-শিক্ষাবিদ-চিকিৎসক-সাংবাদিক-প্রকৌশলীদের ধরে নিয়ে য়ে হত্যা করে। যদিও ২৫ মার্চের কালরাত থেকেই অন্যদের সঙ্গে বুদ্ধিজীবীরাও হত্যার শিকার হয়ে আসছিলেন।
১৪ ডিসেম্বর শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবসে আমরা সেই মহান সন্তানদের স্মরণ করি। শ্রদ্ধা জানাই। কিন্তু যাঁরা নিজেদের জ্ঞান-মনীষা ও অধ্যবসায়ের মাধ্যমে জাতিকে পথ দেখিয়েছেন,আলোকিত করেছেন,তাঁদের বছরের একটি দিন স্মরণ করলেই দায়িত্ব শেষ হয়ে যায় না। তাঁদের শিক্ষাকে অন্তরে ধারণ করতে হবে, নতুন প্রজন্ম কে জানাতে হবে কেন তাঁরা জীবন দিয়েছেন।
শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবসে দেশবাসী গভীর শোক ও শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করছে সেসব মানুষের স্মৃতি,যাঁরা ছিলেন দেশপ্রেম ও মননশীলতায় অগ্রণী এক প্রজন্ম।স্বাধীনতা সংগ্রামের সূচনা থেকে শুরু করে বিজয়ের চূড়ান্ত লগ্ন পর্যন্ত আমরা হারিয়েছি অধ্যাপক জি সি দেব, মুনীর চৌধুরী, জ্যোতির্ময় গুহঠাকুরতা, ড. মোফাজ্জল হায়দার চৌধুরী, রাশীদুল হাসান, ড.আনোয়ার পাশা, সিরাজুদ্দীন হোসেন, শহীদুল্লা কায়সার, নিজামুদ্দীন আহমদ, গিয়াসউদ্দিন আহমদ, ডা. ফজলে রাব্বী, ডা. আলীম চৌধুরী,সেলিনা পারভীনসহ আরও অনেককে।
তাঁরা সবাই ছিলেন উন্নত চিন্তা ও মানবতার দিশারি। জাতীয় জীবনের সব ক্ষেত্রে সেই শূন্যতা আমরা আজও অনুভব করে চলেছি।তাঁদের হারিয়ে বাংলাদেশের অপূরণীয় ক্ষতি হয়েছে।তাঁদের স্বজনেরাও বয়ে চলেছেন এক খণ্ডিত জীবনের ভার। আমরা তাঁদের শোকের সমব্যথী,আমরা তাঁদের ত্যাগের উত্তরাধিকারী।
বিলম্বে হলেও এই বুদ্ধিজীবী হত্যায় জড়িত কয়েকজন শীর্ষ ঘাতকের বিচার ও শাস্তি কার্যকর হয়েছে। কিন্তু আদালতের রায়ে শাস্তিপ্রাপ্ত চৌধুরী মঈনুদ্দীন ও আশরাফুজ্জামান খানের মতো আলবদর কমান্ডারদের দেশে ফিরিয়ে এনে সেই দণ্ড কার্যকর করা সম্ভব হয়নি। মঈনুদ্দীন যুক্তরাজ্যে ও আশরাফুজ্জামান যুক্তরাষ্ট্রে পলাতক। তাদের ফেরত আনার বিষয়ে বাংলাদেশ সরকারকে যেমন কার্যকর উদ্যোগ নিতে হবে, তেমনি দায় রয়েছে সংশ্লিষ্ট দেশ দুটিরও। শহীদ বুদ্ধিজীবীদের স্মৃতি সংরক্ষণের পাশাপাশি দেশকে তাঁদের অনুসৃত পথেই চালিত করতে হবে।
আমরা গভীর বেদনার সাথে স্মরণ করছি জাতির সেই শ্রেষ্ঠ সন্তানদের,স্বাধীনতা সংগ্রামের সূচনা থেকে শুরু করে বিজয়ের চূড়ান্ত লগ্নে যাঁদের আমরা হারিয়েছি। শ্রদ্ধা জানাচ্ছি অধ্যাপক মুনীর চৌধুরী, ড.মোফাজ্জল হায়দার চৌধুরী, ড.আনোয়ার পাশা, রাশেদুল হাসান, সাংবাদিক সিরাজুদ্দীন হোসেন,শহীদুল্লা কায়সার, নিজাম উদ্দীন আহমেদ,গিয়াস উদ্দীন আহমেদ, ডা. ফজলে রাব্বী, ডা.আলীম চৌধুরী,সাংবাদিক সাহিত্যিক সেলিনা পারভীন সহ স্বাধীনতা যুদ্ধের শহীদ বুদ্ধিজীবী দের প্রতি,তাঁদের শোকার্ত পরিবার পরিজনের প্রতি।