সাত দিনের মধ্যে অনিয়মগুলো ঠিক না করলে হাসপাতালটি বন্ধ করে দেয়া হবে : র্যাবের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মো. সারওয়ার আলম
নগর প্রতিবেদক :
রাজধানীর মৌচাকে সিরাজুল ইসলাম মেডিকেলে কলেজ হাসপাতালের বিপুল পরিমানে মেয়াদোত্তীর্ণ সার্জিক্যাল সামগ্রী ও রি-এজেন্ট পাওয়া গেছে। এছাড়া হাসপাতালটিতে কোভিড-১৯ ইউনিট ও মাইক্রো বায়োলোজি ল্যাব একইসঙ্গে স্থাপন করা হয়েছে, যা সম্পূর্ণ নিয়ম বর্হিভূত। এছাড়াও হাসপাতালটিতে একাধিক রোগীর ব্লাড সেম্পল এক সঙ্গে রাখা হতো বলেও প্রমাণ মিলেছে। এসব অনিয়মের দায়ে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষে ৩০ লাখ টামা জরিমানা করেছে র্যাবের ভ্রাম্যমাণ আদালত। সেই সঙ্গে এসব অনিয়ম ঠিক করতে আগামী সাত দিনের সময় বেঁধে দিয়েছেন ভ্রাম্যমাণ আদালত। সাত দিনের মধ্যে অনিয়মগুলো ঠিক না করলে হাসপাতালটি বন্ধ করে দেয়া হবে।
মঙ্গলবার (২৫ আগস্ট) দুপুর থেকে চলা অভিযান শেষ হয় বিকেল ৫টায়। অভিযান শেষে সাংবাদিকদের এসব কথা জানিয়েছেন র্যাবের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মো. সারওয়ার আলম। এই অভিযানে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর ও মন্ত্রণালয়ের টাস্কফোর্সও সমন্বিতভাবে অংশ নেয়৷
র্যাবের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মো. সারওয়ার আলম বলেন, মেয়াদোত্তীর্ণ রি-এজেন্ট, টেস্টিং কিট ব্যবহার, বিপুল পরিমাণে মেয়াদোত্তীর্ণ সার্জিক্যাল সামগ্রী পাওয়া গেছে। এছাড়াও হাসপাতালটির আরও মারাত্বক অনিয়ম পাওয়া গেছে। এছাড়াও হাসপাতালটি অন্য হাসপাতাল থেকে রোগীদের বিভিন্ন পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে নিজেদের প্যাডে রিপোর্ট দিতো। হাসপাতালের রোগীদের রক্তের সেম্পল সংগ্রহ করে এক সঙ্গে রাখতো। ল্যাবে আমরা বেশকিছু প্যাট্রিটিডিক্স পেয়েছি। নিয়ম অনুযায়ী একজন রোগীর রক্তের সেম্পল রাখার জন্য একটি প্যাট্রিটিডিক্স ব্যবহারের কথা। তবে হাসপাতালের ল্যাবে একটি প্যাট্রিটিডিক্সে একসঙ্গে তিনজন রোগীর রক্তের সেম্পল রাখা হতো। এতে আমরা ধারণা করছি, হাসপাতালে রোগীদের রক্তের সব পরীক্ষা রিপোর্ট ভুয়া হয়েছে।
হাসপাতালের মারাত্বক অনিয়ম সম্পর্কে সারওয়ার আলম বলেন, হাসপাতালের ১২ ও ১৩ তলায় কোভিড-১৯ ইউনিট করা হয়েছে৷ একই ফ্লোরে রয়েছে হাসপাতালটির মাইক্রো বায়োলোজিক্যাল ল্যাব। ওই তলায় বাম পাশে কোভিড-১৯ ইউনিট এবং ডান পাশে ল্যাব। কোন হাসপাতালে কোভিড-১৯ ইউনিট ও মাইক্রো বায়োলোজিক্যাল ল্যাব একই ফ্লোরে এক সঙ্গে থাকতে পাড়ে না। এটি হাসপাতালের মারাত্বক একটি অনিয়ম। এছাড়াও এখানে মাইক্রো বায়োলোজিক্যাল ল্যাব থাকলেও সেখানে কোনো মাইক্রো বায়োলোজিস্ট ছিল না। হাসপাতালের ল্যাবের অবস্থাও খুব খারাপ দেখা গেছে। এছাড়াও হাসপাতালে ব্লাড সঠিক তাপমাত্রায় সংরক্ষণ করা হয়নি।
এসকল অনিয়মের কারণে হাসপাতাল ও কর্তৃপক্ষকে সর্বমোট ৩০ লাখ টাকা জরিমানা করা হয়েছে। সেই সঙ্গে এসব অনিয়ম ঠিক করতে প্রতিষ্ঠানটিকে সাত দিনের সময় দেয়া হয়েছে। এর মধ্যে অনিয়ম ঠিক না হলে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেয়া হবে বলেও জানান তিনি।
বেসরকারি হাসপাতালগুলোতে অভিযান পরিচালার ক্ষেত্রে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের কোনো অনুমতির নেয়ার বাধ্যবাধকতা রয়েছে কি না? সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট সারওয়ার আলম বলেন, আইন অনুযায়ী মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করা ক্ষেত্রে কারও অনুমতি নেয়ার প্রয়োজন নেই। কারণ আইন অনুযায়ী মোবাইল কোর্ট পরিচালনাকারী সম্পূর্ণ স্বাধীন। কোর্ট পরিচালনা করার ক্ষেত্রে পরিচালনাকারীকে সর্বাত্মক সহযোগিতা আইন সংবিধান অনুযায়ী সরকার দিতে বাধ্য। আগে অভিযান পরিচালনা করার ক্ষেত্রে মন্ত্রণালয়কে জানাতে হতো। তবে বর্তমানে মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা আমাদের অভিযানের সঙ্গে থাকছে। এতে বাস্তব চিত্রগুলো তারা সরেজমিনে থেকেই জানতে পারছে। আগামীতেও মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা আমাদের সঙ্গে থেকে সহায়তা করবে।
অভিযানে থাকা স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের (টাস্কফোর্স) যুগ্ম সচিব উম্মে সালমা তানজিয়া বলেন, হাসপাতালটিতে যেসব নিয়ম মানার কথা তার একটা নিয়মও তারা মানে নাই। তাদের বিরুদ্ধে বড় অভিযোগ মাইক্রো বায়োলোজিক্যাল ল্যাব ও করোনা ইউনিট একই জায়গায়। একই দরজা দিয়ে বের হয়ে একই জায়গায় মাইক্রো বায়োলজি ল্যাব ও করোনা ইউনিটের আইসিইউ।
তিনি বলেন, এটা আমাদের নিয়মিত অভিযান। এ ধরনের অভিযান অব্যাহত থাকবে। দেশের প্রতিটি হাসপাতাল যাতে উন্নত সেবা প্রদান করে থাকে সে কারণে অভিযান চলবে।
সারওয়ার আলম যেই হাসপাতালে যাচ্ছেন সেই হাসপাতালেই বিভিন্ন অনিয়ম লক্ষ করা যাচ্ছে। আপনারা কেন এ ধরনের অনিয়মের বিরুদ্ধে অভিযান পরিচালনা করেছেন না? এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, এটা আমাদের সমন্বিত অভিযান।