জো বাইডেন। ছবি: এএফপি।
আন্তর্জাতিক ডেস্কঃ
যুক্তরাষ্ট্রের আত্মার লড়াইয়ে গণতন্ত্র রক্ষা পেয়েছে। জনতার ইচ্ছার জয় হয়েছে। ইলেক্টোরাল ভোটে জয়ী হওয়ার পর নবনির্বাচিত মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন এ মন্তব্য করেছেন। গতকাল সোমবার (১৪ ডিসেম্বর) যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনপদ্ধতির দ্বিতীয় ধাপে ইলেক্টোরাল কলেজের ভোট অনুষ্ঠিত হয়। ইলেক্টোরাল ভোটের ফলাফলে বিজয় নিশ্চিত হওয়ার পর ডেমোক্র্যাট প্রার্থী বাইডেন জাতির উদ্দেশে বক্তৃতা দেন। যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের দ্বিতীয় ধাপ পার হওয়ার পর নবনির্বাচিত প্রেসিডেন্ট বাইডেন এসব কথা বলেন।
যুক্তরাষ্ট্রের স্থানীয় সময় সোমবার সন্ধ্যার পর বৃহত্তর অঙ্গরাজ্য ক্যালিফোর্নিয়া তাদের ইলেক্টোরাল ভোটের ফলাফল আনুষ্ঠানিকভাবে ঘোষণার পর বাইডেনের নিশ্চিত ভোট ২৭০টি পেরিয়ে যায়। চূড়ান্ত গণনায় বাইডেন ৩০৬টি ও ট্রাম্প পেয়েছেন ২৩২টি ইলেক্টোরাল কলেজ ভোট।
বক্তৃতায় বাইডেন বলেন, যুক্তরাষ্ট্রে রাজনীতিবিদেরা ক্ষমতা গ্রহণ করেন না। জনগণ রাজনীতিবিদদের ক্ষমতা গ্রহণের অনুমোদন দেন।
বাইডেন বলেন, ‘আমরা জনগণ ভোট দিয়েছি। প্রতিষ্ঠানের প্রতি আমাদের আস্থা অবিচল রয়েছে। নির্বাচনের গ্রহণযোগ্যতা অটুট রয়েছে।’
নির্বাচনের ফলাফল পাল্টে দেওয়ার জন্য বর্তমান প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের চেষ্টার কথা উল্লেখ করেন বাইডেন। তিনি বলেন, সুপ্রিম কোর্ট ঐক্যবদ্ধ হয়ে নির্বাচনের ফলাফল পাল্টে দেওয়ার প্রয়াস প্রতিহত করেছেন।
বাইডেন বলেন, দেশের ৮ কোটি ১০ লাখের বেশি মানুষ তাঁকে ও ভাইস প্রেসিডেন্ট পদে কমলা হ্যারিসকে ভোট দিয়েছেন।
আমেরিকার ইতিহাসে কোনো প্রেসিডেন্ট প্রার্থীর ভোটপ্রাপ্তির এই রেকর্ডের কথা উল্লেখ করে বাইডেন বলেন, ২০১৬ সালে ট্রাম্প-পেন্সের সমান ইলেক্টোরাল কলেজ ভোট পেয়ে তাঁরা জয়লাভ করেছেন।
একসময় প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার ভাইস প্রেসিডেন্ট হিসেবে বাইডেন তখনকার বিজয়ী ট্রাম্প-পেন্সকে ক্ষমতা বুঝিয়ে দিয়েছিলেন। এখন স্পষ্ট ফলাফলের নির্বাচনে একইভাবে তাঁদের (বাইডেন-হ্যারিস) কাছে ক্ষমতা বুঝিয়ে দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন নবনির্বাচিত প্রেসিডেন্ট।
৩ নভেম্বর অনুষ্ঠিত প্রতিটি অঙ্গরাজ্যের সংখ্যাগরিষ্ঠ ভোটের ফলাফলের ভিত্তিতে অঙ্গরাজ্যের ইলেক্টোরাল প্রতিনিধিরা অঙ্গরাজ্য সভায় আনুষ্ঠানিক ভোট দেন। যুক্তরাষ্ট্রের ৫০টি অঙ্গরাজ্য ও ওয়াশিংটন ডিসি মিলে মোট ৫৩৪টি ইলেক্টোরাল ভোট। এর মধ্যে ২৭০টি ভোটের সংখ্যাগরিষ্ঠতা প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হওয়ার জন্য যথেষ্ট।
অঙ্গরাজ্যগুলো থেকে ইলেক্টোরাল ভোট নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে ওয়াশিংটনে পাঠানো হবে। ৬ জানুয়ারি কংগ্রেসের যৌথ অধিবেশনে এসব ভোটের বন্ধ খাম খুলে আবার গণনা করা হবে। সেখানে আইনপ্রণেতারা আপত্তি উত্থাপনের সুযোগ পাবেন। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের পক্ষে শতাধিক রিপাবলিকান আইনপ্রণেতা এমন আপত্তি উপস্থাপন করতে পারেন। কংগ্রেসের ডেমোক্র্যাট সংখ্যাগরিষ্ঠতা এমন যেকোনো আপত্তির প্রয়াস নাকচ করতে পারবে বলে মনে করা হচ্ছে।
নজিরবিহীন কোনো অস্বাভাবিক ঘটনা না ঘটলে আগামী ২০ জানুয়ারি নতুন প্রেসিডেন্ট হিসেবে বাইডেন শপথ নেবেন। নানা ঘটনার মধ্য দিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের ৪৬তম প্রেসিডেন্ট হিসেবে যাত্রা শুরু হবে বাইডেন প্রশাসনের।
গতকাল রাতে দেওয়া বক্তৃতায় বাইডেন বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্রে গণতন্ত্রের লেলিহান শিখা আগেই প্রজ্বলিত হয়েছে। মহামারি, ক্ষমতার অপব্যবহার—কোনো কিছুই গণতন্ত্রের এই প্রজ্বলনকে নিষ্প্রভ করতে পারেনি।বাইডেন তাঁর বক্তৃতায় বলেন, ‘এখন পৃষ্ঠা পাল্টে ঐক্যবদ্ধ হওয়া এবং আহত অবস্থা থেকে নিরাময় হওয়ার সময়।’বাইডেন জাতির উদ্দেশে দেওয়া তাঁর বক্তৃতায় বলেছেন, মহামারি মোকাবিলার মতো জরুরি কাজ তাঁর সামনে। দ্রুততার সঙ্গে নাগরিকদের কাছে অর্থনৈতিক সহযোগিতা পৌঁছে দেওয়াসহ আমেরিকার অর্থনীতি পুনর্গঠনে তাঁর প্রশাসন অবিলম্বে ঝাঁপিয়ে পড়বে।
এদিকে বিভিন্ন অঙ্গরাজ্যে ট্রাম্প-সমর্থকদের বিক্ষোভ-সমাবেশ করতে দেখা গেছে। ট্রাম্পের মতোই তাঁর সমর্থকেরা বিক্ষোভ সমাবেশে নির্বাচনে কারচুপি হয়েছে বলে দাবি করেন। তবে কোথাও কোনো বড় ধরনের অঘটন ছাড়াই অঙ্গরাজ্য সভাগুলো ইলেক্টোরাল ভোটের প্রক্রিয়া সম্পন্ন করেছে।
কোনো কোনো অঙ্গরাজ্যের রিপাবলিকান আইনপ্রণেতারা প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের পক্ষে তাঁদের মতামত দিয়ে আপত্তি রেকর্ড করেছেন। এতে ফলাফলে পরিবর্তন আসার কোনো কারণ নেই।