ধর্ষনবিরোধী আন্দোলনের নামে দেশকে অশান্ত করা ও সরকারকে বেকায়দায় ফেলার ষড়যন্ত্র চলছে

Bagom.jpg

ধর্ষণের সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ড করার বিষয়টি বিবেচনা করছে সরকার, আন্দোলনের আগেই সরকার ব্যবস্থা নিয়েছে। এসব অপরাধ ও ঘৃণ্য অপকর্মের বিরুদ্ধে শেখ হাসিনা সরকারের অবস্থান সবসময়ই স্পষ্ট এবং কঠোর : ওবাদুল কাদের

নগর প্রতিবেদক ::

নোয়াখালীতে গৃহবধূকে নির্যাতনের ঘটনায় দ্রুত সময়ের মধ্যে অভিযুক্তদের গ্রেপ্তার করে আইনি প্রক্রিয়া শুরু করার পরও আন্দোলনকে কেন্দ্র করে গত দুদিনের কর্মকাণ্ডে সরকারবিরোধী চক্রান্ত স্পষ্ট হয়ে উঠেছে। আন্দোলনকারীদের শ্লোগান, পোস্টার পেস্টুন দেখে মনে হচ্ছে না তারা ধর্যকদের বিচার চায়। ধর্ষণবিরোধী আন্দোলনের নামে এরা কী দেশকে অশান্ত করে সরকারকে বেকায়দায় ফেলার অপতৎপরতা চলছে। মাজখানে ভোগান্তি হচ্ছে নগরবাসীদের।

ধর্ষণবিরোধী এই আন্দোলনে বাম ছাত্র সংগঠনের আন্দোলনে ঢুকে স্বাধীনতাবিরোধী জামায়াত ও বিএনপি সরকারকে মারমুখী অবস্থানে আনতে উস্কে দিচ্ছে। সরকারের শীর্ষপর্যায় থেকে ধর্ষণের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশনা দিলেও সরকারবিরোধী শ্লোগান দেয়া হচ্ছে।

বিগত সময়ে আন্দোলনে ব্যর্থ হয়ে বিএনপি-জামায়াত ফায়দা হাসিলে সামাজিক আন্দোলনে ভর করে সরকার পতন ঘটানোর নকশা কষছে বলে মনে করছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। এর আগেও একাধিক অরাজনৈতিক ও সামাজিক আন্দোলন ঘিরে অপরাজনীতি করেছে বিএনপি।

ধর্ষকদের সর্বোচ্চ শাস্তি নিশ্চিত করার দাবি সবার। সরকারী দলও এই দাবি জানিয়েছি। প্রধানমন্ত্রী, আওয়ামী লীগ সহযোগী সংগঠনগুলোও মানববন্ধন করেছে। শাস্তি নিশ্চিতে সরকার বদ্ধপরিকর। সেখানে আন্দোলনের নামে কেউ ঘোলা পানিতে মাছ শিকারের চেষ্টা করে লাভবান হবে না। অতীতেও দেখেছি, তারা চেষ্টা করে লাভবান হয়নি, এবারো হবে না। তবুও অযথা মানুষকে বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করছে।

রাজনৈতিক ও সামাজিক বিশ্লেষকরা বলছেন, নোয়াখালীর বেগমগঞ্জে গৃহবধূকে বিবস্ত্র করে নির্যাতনের ঘটনাটি সরকার খুবই গুরুত্ব সহকারে নিয়েছে। ঘটনা জানাজানির পরদিনই অপরাধীদের গ্রেপ্তার করেছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। কিন্তু তারপরও আন্দোলনের নামে একটি পক্ষ সরকারকে বিব্রত করার অপচেষ্টায় মেতে উঠেছে। যা আন্দোলনের চিত্র দেখলেই বুঝা যায়। আন্দোলনের নামে সরকার পতনের ষড়যন্ত্র চালাচ্ছে।

নোয়াখালীর ঘটনা জানাজানির পর শাহবাগে ধর্ষকদের শাস্তির দাবিতে ধর্ষণবিরোধী চলমান আন্দোলনে ছাত্র ইউনিয়নসহ বেশ কয়েকটি বাম সংগঠন অংশ নেয়। ৬ অক্টোবর রাজধানীর উত্তরাসহ কয়েকটি স্থানে বিক্ষোভ করে শিক্ষার্থীরা।

ধর্ষকদের শাস্তির দাবি করে আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনগুলো। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও ধর্ষকদের সর্বোচ্চ শাস্তি নিশ্চিতের নির্দেশনা দিয়েছেন। আন্দোলনের দাবিতে সমর্থন জানিয়ে আইন সংশোধনের উদ্যোগ নিচ্ছে সরকার।

গতকাল বৃহস্পতিবার এ বিষয়ে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বলেছেন, ধর্ষণের সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ড করার বিষয়টি বিবেচনা করছে সরকার। ধর্ষণের শাস্তি বাড়িয়ে মৃত্যুদণ্ড করে সংশোধিত ‘নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন, ২০০০’ এর খসড়া আইন মন্ত্রিসভা বৈঠকে অনুমোদনের জন্য পাঠানো হবে।

সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, সরকার যথাযথ উদ্যোগ নিলেও গত দুই দিনে আন্দোলন ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করার চেষ্টা দেখা যাচ্ছে। আন্দোলনে ধর্ষকদের শাস্তির পরিবর্তে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পদত্যাগে নানা অশ্লীল শ্লোগান দেয়া হচ্ছে।

এছাড়া আন্দোলনে ব্যবহূত ছবি ব্যবহার করে সরকারকে মারমুখি করার চেষ্টা করছে একটি পক্ষ। আর সে পক্ষটি হলো স্বাধীনতাবিরোধী শক্তি জামায়াত-বিএনপি, তার প্রমাণও মিলেছে। শাহবাগে চলা আন্দোলনে জামায়াত-শিবিরের আদর্শের লোকজনের উপস্থিতি প্রশ্নবিদ্ধ করছে।

গত সোমবার শাহবাগে ছাত্র ইউনিয়ন আয়োজিত প্রতিবাদ সভায় বক্তৃতা দেন জামায়াতের বি টিম হিসেবে পরিচিত আমার বাংলাদেশ পার্টি অর্থাৎ এবি পার্টির যুগ্ম আহ্বায়ক আব্দুল ওহাব মিনার। যা নিয়ে ক্ষুব্ধ হয়েছেন সাধারণ আন্দোলনকারীরা।

বাংলাদেশ ছাত্রলীগের সভাপতি আল নাহিয়ান খান জয় বলেন, ধর্ষক বা অপরাধীদের গ্রেপ্তার করতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এরই মধ্যে ধর্ষকরা গ্রেপ্তার হয়েছে। তারা আসলে চায় কি। আন্দোলনকারীরা ধর্ষকদের বিচার না চেয়ে সরকারের পতন চাচ্ছে। এখানে আসলে ষড়যন্ত্র চলছে।

বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক অনিক রায় বলেন, আব্দুল ওহাব মিনার সমাবেশে যোগ দিয়ে তার রাজনৈতিক পরিচয় প্রকাশ করেননি। কিন্তু, রাতের বেলা যখন এবি পার্টির ফেসবুক পেজে তার বক্তৃতার ভিডিও আপলোড করা হয় তখন আমরা জানতে পারলাম তিনি এবি পার্টির যুগ্ম আহ্বায়ক।

শুধু শাহবাগ নয়, এই সুযোগে ধর্ষণের প্রতিবাদের নামে সারা দেশে মাঠে নেমেছে স্বাধীনতাবিরোধী জামায়াতে ইসলামী ও ছাত্রশিবির। বেশকিছু স্থানে সরকারের পদত্যাগ চেয়ে মিছিল করেছে। গতকাল বিভিন্ন স্থানে বিক্ষোভ সমাবেশ করেছে বিএনপি। তাদের পরিচয় হচ্ছে- একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধের সময় ধর্ষণ করেছে পাক হানাদার বাহিনী। তাদের প্রধান সহযোগী যারা ছিলো তারাই এখন ধর্ষণকে সামনে এনে রাজনীতি করার চেষ্টা করছে। একাত্তরের ধর্ষক এবং আজকের ধর্ষক, সব ধর্ষকই অপরাধী। এদের বিরুদ্ধে সরকার কঠোর অবস্থানে আছে এবং তাদের বিচার হচ্ছে। কিন্তু সেখানে যদি কেউ রাজনৈতিকভাবে ব্যবহার করে ফায়দা লুটতে চায় তাহলে তাদের প্রতিহত করা হবে।

আন্দোলনের নামে ষড়যন্ত্র হচ্ছে বলে মনে করেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। গতকাল তিনি বলেছেন, আন্দোলনের আগেই সরকার ব্যবস্থা নিয়েছে। এসব অপরাধ ও ঘৃণ্য অপকর্মের বিরুদ্ধে শেখ হাসিনা সরকারের অবস্থান সবসময়ই স্পষ্ট এবং কঠোর।

কিন্তু একটি দল রাজনৈতিক ফায়দা হাসিলের অপচেষ্টা করছে। বিএনপি এসব ঘটনাকে অন্যদিকে ঘোরানোর অপচেষ্টায় লিপ্ত। যখনই কোনো ইস্যু পায় তা খড়কুটোর মতো আঁকড়ে ধরে সরকারবিরোধী আন্দোলনের অপপ্রয়াস চালায়।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

scroll to top