লালশাক আর সরিষার মাঠে বঙ্গবন্ধুকে আঁকলেন কৃষক কাদির
নিউজ ডেস্কঃ
ভাষা থেকে স্বদেশ বাঙালির নিজস্ব ঠিকানা বাংলাদেশ। বাঙালির স্বাধীন স্বদেশ স্বপ্নকে বা্স্তবে রূপ দিলেন বাঙালির জাগরণে নেতা জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান।। ১৯৫৭ সালে বাংলার শেষ নবাব সিরাউদ্দৌলার পতনের পর বাংলার আকাশে যে সূর্য অস্তমিত হলো, ১৯৭১ সালে বাঙালির হাজর বছরেষ শ্রেষ্ঠ সন্তান বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের হাত ধরে স্বাধীন বাংলাদেশের আকাশে ১৬ ডিসেম্বর নতুন করে উদয় হলো।
বঙ্গবন্ধু, স্বাধীনতা, জাতীয় পতাকা আর বাংলার প্রকৃতি একইসূত্রে গাঁথা। অপরূপ প্রকৃতির লাল-সবুজ ফসলের মাঠে রঙিন লালশাক আর সরিষা রোপণ করে পরম মমতায় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতিকৃতি ও স্মৃতিসৌধ এঁকেছেন ঈশ্বরগঞ্জের কৃষক আব্দুল কাদির। বঙ্গবন্ধুর ছবির চারপাশে জাতীয় পতাকা, জাতীয় ফুল শাপলা আর নৌকার ছবি বাড়িয়েছে সৌন্দর্যের মাত্রা। লালশাক আর সরিষার চারাগুলো বড় হচ্ছে আর স্পষ্ট ও নান্দনিক হয়ে উঠছে বাংলাদেশের স্থপতির অবয়ব। বঙ্গবন্ধুর প্রতি অগাধ ভালোবাসা থেকেই ফসলের এমন শিল্পকর্ম বলে জানান কৃষক আব্দুল কাদির। যে জমিনে পরম ভালোবাসায় বেড়ে উঠে শষ্য সেই জমিতে হৃদয়খচিত ভালোবাসার বহিঃপ্রকাশ ঘটিয়েছেন তিনি।
মুজিববর্ষ উপলক্ষে ময়মনসিংহের ঈশ্বরগঞ্জে নিজের জমিতে লালশাক ও সরিষা দিয়ে পরম মায়ায় এঁকেছেন জাতির জনকের প্রতিকৃতি, স্মৃতিসৌধ, নৌকা, শাপলা ও মুজিববর্ষ। শিল্পী কৃষকের সৌন্দর্যময় ফসলের মাঠ দেখতে প্রতিদিন ভিড় করছেন মানুষ।
গত বছরও নিজের স্ত্রীর প্রতি ভালোবাসার বহিঃপ্রকাশ হিসেবে ‘ভালোবাসার জমিন’ বানিয়েছিলেন কৃষক আবদুল কাদির। ফসলের মাঠে “নকশি কাঁথা” এঁকে আলোচিত হয়েছিলেন তিনি। এবার তার ভালোবাসার জমিনে লালশাক আর সরিষা দিয়ে আঁকলেন বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য।
কৃষক আবদুল কাদিরের বাড়ি ময়মনসিংহের ঈশ্বরগঞ্জে উপজেলার আঠারবাড়ি ইউনিয়নের পাড়া খালবলা গ্রামে। কৃষক মো. তারা মিয়ার মেঝ ছেলে আবদুল কাদির। স্ত্রীর নাম মকসুদা আক্তার। দুই ছেলে ও এক মেয়ের জনক ৪১ বছর বয়সী আবদুল কাদির পঞ্চম শ্রেণিতে পড়ার সময় নিজেদের জমিতে কাজ শুরু করেন। পরে আর পড়ালেখা হয়নি। মাঠেই দিন-রাত পরিশ্রম করে সোনার ফসল ফলান তিনি।
১ ডিসেম্বর নিজের ৩৩ শতক জমিতে পাড়া খালবলা বন্ধু মহল ক্লাবের সদস্যদের নিয়ে এঁকেছেন অনন্য শিল্পকর্ম। চারদিকে যখন ভাস্কর্য নিয়ে তোলপাড় চলছে সে সময় সরিষা ও লালশাক দিয়ে নিজের জমিতে পরম মায়ায় রূপ দিয়েছেন জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেষ মুজিবুর রহমানের প্রতিকৃতি। সঙ্গে এঁকেছেন মুজিব শতবর্ষ, স্মৃতিসৌধ, শাপলা ও নৌকা। কাদিরের শৈল্পিক কৃষিতে বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতি দেখতে ও ছবি তুলতে জমির পাশেই নির্মাণ করা হয়েছে বাঁশ দিয়ে একটি টাওয়ার। মুজিববর্ষ উপলক্ষে এবং চলমান ভাস্কর্য নিয়ে তোলপাড়ের মধ্যে বঙ্গবন্ধুর চেতনা জাগ্রত রাখতে কৃষক কাদির নিজের সামর্থ্যানুযায়ী ফসলের মাঠে হৃদয় নিংড়ানো ভালোবাসার প্রকাশ ঘটিয়েছেন।
কৃষক কাদির বলেন, আমার তো আর সভা- সমাবেশে বক্তব্য দিয়ে বঙ্গবন্ধুর প্রতি ভালোবাসা প্রকাশের সুযোগ নেই। আমার কর্মক্ষেত্র আর ভালোবাসার স্থান ফসলের ক্ষেতেই বঙ্গবন্ধুর প্রতি ভালোবাসার প্রকাশ ঘটিয়েছি। তিনি বলেন, বছরের অন্য সময় জমি চাষ করে আর্থিক লাভবান হন। কিন্তু জাতির জনকের চেতনা সবার মাঝে ছড়িয়ে দিতে ভিন্ন কিছু করেছি।
পাড়া খালবলা বন্ধু মহল ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক নাইমুল ইসলাম সোহেল বলেন, মুজিববর্ষে বঙ্গবন্ধুর চেতনা প্রজন্মের মাঝে ছড়িয়ে দিতে এটি করা হয়েছে।
ঈশ্বরগঞ্জ উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা সাধন কুমার গুহ মজুমদার জানান, কৃষক কাদির মানসিক সৌন্দর্যের বহিঃপ্রকাশ ঘটিয়েছেন ফসলের মাঠে। আর্থিক লাভবান না হলেও দূর-দূরান্ত থেকে লোকজন শৈল্পিক কাজ দেখতে আসার মধ্যেই তৃপ্তি কৃষকর। তার কাজে কৃষি বিভাগ গর্বিত। তাকে রাজস্ব বাজেটের সরিষার প্রদর্শনী মাঠ দেওয়া হয়েছে। আগামী বছরের বঙ্গবন্ধু কৃষি পদকের জন্য তার নাম প্রস্তাব করা হবে বলেও জানান তিনি।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা কৃষক কাদিরের ফসলের মাঠ পরিদর্শন করে বলেন, মৌলবাদীদের বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্যের প্রতি অবমাননার প্রতিবাদ কৃষক আব্দুল কাদিরের ফসলের মাঠে বঙ্গবন্ধুর এই প্রতিকৃতি। এতে আমরা গর্বিত। তাকে প্রশাসনের পক্ষ থেকে সব ধরনের সহায়তা করা হবে।
এদিকে কৃষক আব্দুল কাদিরের ফসলের মাঠে বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতির ছবি নিজের ফেসবুক পেজে পোস্ট করেছেন কৃষিমন্ত্রী ড. আবদুর রাজ্জাক।