মহানগরী বিএনপির ভোটকেন্দ্রভিত্তিক কমিটি চান ইশরাক

image-198911-1.jpg

ঢাকার দুই কমিটি পরিচালনার জন্য কেন্দ্রে আরেক কমিটি থাকবে

নগর প্রতিনিধ

ঢাকা সিটি করপোরেশনে (ডিসিসি) নির্বাচিত মেয়র একজনই থাকা উচিত—এমন ভাবনা ব্যক্ত করে মহানগরী বিএনপির কাঠামো পরিবর্তনের একটি প্রস্তাব দিয়েছেন ইঞ্জিনিয়ার ইশরাক হোসেন। গত নির্বাচনে বিএনপির এই মেয়র প্রার্থী সম্প্রতি প্রস্তাবটি দলের হাইকমান্ডের কাছে দিয়েছেন বলে নির্ভরযোগ্য সূত্র মিডিয়াকে নিশ্চিত করেছে। ওই জানায়, বিশেষ বার্তা বাহকের মাধ্যম ছাড়াও ই-মেইলের মাধ্যমে লন্ডনে দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের কাছে ওই প্রস্তাব পাঠিয়েছেন ইশরাক।

এ বিশয়ে জানতে চাইলে এমন প্রস্তাব দেওয়ার কথা স্বীকার করে ইশরাক হোসেন শুক্রবার বলেন, ‘মহানগরী বিএনপির কাঠামো নিয়ে আমার ভাবনা মেয়র হওয়া বা পদ পাওয়ার আকাঙ্ক্ষা থেকে নয়। গত মেয়র নির্বাচনে অংশ নেওয়ার পর যে অভিজ্ঞতা তাতে মনে হয়েছে, এ ধরনের কাঠামো থাকলে সংগঠনকে তৃণমূল পর্যায়ে নিয়ে যাওয়া  যাবে।’ বিএনপির তরুণ এই নেতা বলেন, ‘বিএনপি একটি গণতান্ত্রিক দল। ফলে আন্দোলন ও নির্বাচনের মধ্য দিয়েই ক্ষমতায় যেতে হবে। তাই তৃণমূলের সবাইকে সম্পৃক্ত করার লক্ষ্য নিয়ে আমি কাজ করছি।’

সর্বশেষ ডিসিসি নির্বাচনে ঢাকা দক্ষিণে দলীয় মেয়র প্রার্থী ইশরাক বিএনপির বৈদেশিক সম্পর্ক বিষয়ক কমিটির সদস্য। আর দলটির নির্বাহী কমিটির সদস্য তাবিথ আউয়াল ছিলেন ডিসিসি উত্তরের প্রার্থী ছিলেন।

‘এক ঢাকার’ বিষয়ে তাঁদের দুজনের ঐকমত্য রয়েছে বলে জানা যায়।  জানতে চাইলে তাবিথ আউয়াল বলেন, ‘আমিও এক ঢাকার পক্ষে। কারণ বিভক্ত ঢাকায় রাজনীতি বলেন আর প্রশাসন বলেন, সবটাই পরিচালনা করা কঠিন। তা ছাড়া রাজউক, ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ, ওয়াসাসহ নাগরিক সেবার আরো অনেক কিছু একটা ইউনিট পরিচালিত হচ্ছে।’ এক প্রশ্নের জবাবে তাবিথ আউয়াল বলেন, ‘মহানগরী কাঠামো প্রস্তাবের বিষয়ে ইশরাক হোসেন আমার সঙ্গে আলাপ করেছে। অনেকগুলো বিষয়ে আমিও একমত। তবে নির্বাচনী কেন্দ্রভিত্তিক কমিটির বিষয়ে আমার মত হলো, এলাকা এবং প্রতিটি মহল্লাভিত্তিক কমিটি গঠন করা।’

প্রস্তাবের বিশয়ে জানতে চাইলে ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপির সভাপতি হাবিব উন নবী খান সোহেল বলেন, ‘ইশরাকের প্রস্তাবের বিষয়ে আমি কিছু জানি না। তবে এটি ঠিক যে মহনগরী বিএনপি ভাগ করা দলের জন্য ভালো হয়নি। তা ছাড়া আওয়ামী লীগ যেদিকে হাঁটবে সেদিকে না হাঁটার আমি বিরোধিতাই করেছিলাম।’

বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতাদের সঙ্গে আলাপ করে জানা গেছে, মহানগর বিএনপি বর্তমান উত্তর ও দক্ষিণে যে কাঠামো সেটি থাকবে। তবে পুনর্গঠন করার সময় ওই কমিটি পরিচালনার জন্য ওপরে আরেকটি কমিটি থাকবে। দুই কমিটির কারণে আন্দোলন-সংগ্রামের সময় সমন্বয়ে সমস্যা তৈরি হয় বলে মনে করে দলটির হাইকমান্ড। তবে মেয়র নির্বাচনের বিষয়টি আগের অবস্থায় (এক ঢাকা) ফিরিয়ে আনার জন্য তারা অনুকূল সময়ের জন্য অপেক্ষা করবে। বর্তমান সরকারের সময় সময়টিকে তারা প্রতিকূল বলে মনে করছে।

২০০২ থেকে ২০১১ সাল পর্যন্ত টানা ১০ বছর অবিভক্ত ঢাকার মেয়র ছিলেন ইশরাকের বাবা প্রয়াত সাদেক হোসেন খোকা। এরপর ঢাকা সিটি করপোরেশন দুই ভাগে ভাগ করা হলে মেয়র পদ থেকে বাদ পড়েন খোকা। তবে ওই সময়ই বিএনপি ঘোষণা দেয় যে ক্ষমতায় গেলে তারা আবার দুই সিটি করপোরশনকে এক করবে।

ইশরাকের প্রস্তাবে আরো যা থাকছে

ইশরাকের প্রস্তাবে বর্তমান কাঠামো অনুযায়ী উত্তর ও দক্ষিণে পৃথক দুটি কমিটি থাকলেও সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের নেতৃত্বে ঢাকার কেন্দ্রের জন্য আরেকটি কমিটি রাখার কথা বলা হয়েছে। ঢাকার কেন্দ্রের ওই কমিটি উত্তর ও দক্ষিণের দুই কমিটিকে নির্দেশনা দেবে।

প্রস্তাবে বলা হয়েছে, লন্ডনসহ বিশ্বের অনেক দেশের বড় বড় নগরীতে কেন্দ্রে একজন এবং বিভিন্ন এলাকাভিত্তিক মেয়র নির্বাচনের নজির রয়েছে। ডিসিসিতে বর্তমানে ১০টি জোন রয়েছে। এ ছাড়া সিটি নির্বাচনসহ জাতীয় ও সব ধরনের স্থানীয় নির্বাচনে যেসব স্থাপনায় ভোটকেন্দ্র থাকে এমন স্থাপনাগুলোকে ইউনিট ঘোষণা করে সেখানে দলের পাশাপাশি আগ্রহী সমমনা ও সমর্থকদের দিয়ে কমিটি গঠন করারও প্রস্তাব করা হয়েছে। প্রস্তাবে বলা হয়েছে, বিএনপি ও এর অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীদের বাধ্যতামূলকভাবে ওই কমিটির সদস্য হতে হবে। এ ছাড়া আগ্রহী বিএনপির সমমনা ও সমর্থকরাও ওই কমিটির সদস্য হতে পারবেন।

প্রস্তাব অনুযায়ী ওয়ার্ডের সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হবেন ইউনিটের ওই সদস্যদের সরাসরি ভোটে। নির্দিষ্ট সময়সীমার মধ্যে তাঁরাই ওয়ার্ডের পূর্ণাঙ্গ কমিটি করবেন। ওয়ার্ডের সভাপতি-সাধারণ সম্পাদকরা পর্যায়ক্রমে থানার সভাপতির দায়িত্ব পালন করবেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

scroll to top