চাকরি হারানোর ঝুঁকিতে ১ কোটি ৩০ লাখ মানুষ

1111.jpg

নিজস্ব প্রতিবেদক

চলমান প্রাণঘাতী করোনাভাইরাসের প্রভাবে দেশের এক কোটি ৩০ লাখ নাগরিক চাকরি হারানোর ঝুঁকিতে রয়েছেন বলে বেসরকারি গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) এক সংলাপে উঠে এসেছে। সংস্থাটি বলেছে, কভিড-১৯-এর ফলে অস্থায়ী কিংবা খণ্ডকালীন কর্মসংস্থানের সঙ্গে নিয়োজিত নাগরিকরা চাকরি হারানোর ঝুঁকিতে পড়েছেন। ২০১৬-১৭ শ্রমশক্তি জরিপের উপাত্ত পর্যালোচনা করে এ প্রাক্কলন করা হয়েছে বলে জানিয়েছে সিপিডি। বর্তমান পরিস্থিতি বিবেচনায় নিলে কর্ম হারানোর ঝুঁকিতে থাকা নাগরিকের সংখ্যা আরো বাড়তে পারে বলেও জানিয়েছে সিপিডি।

গতকাল বৃহস্পতিবার টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা বা এসডিজি বাস্তবায়নে নাগরিক প্ল্যাটফর্ম, বাংলাদেশের আয়োজনে এসডিজির নতুন চ্যালেঞ্জ ও বাজেট ২০২০-২১ শীর্ষক এক ভার্চুয়াল সংলাপে এসব তথ্য জানানো হয়।

এসডিজি বাস্তবায়নে নাগরিক প্ল্যাটফর্ম থেকে জানানো হয়েছে, কভিড-১৯-এর ফলে দেশের পিছিয়ে পড়া ও প্রান্তিক জনগোষ্ঠী সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিতে পড়েছেন। চলমান অবস্থা থেকে উত্তরণে সরকার একটি বিশেষ অর্থনীতি পুনরুদ্ধার কার্যক্রম বিবেচনা করতে পারে। দেশের অর্থনীতি পুনরুদ্ধার এবং নাগরিকদের কর্মসংস্থানসহ অর্থনৈতিক সুরক্ষা নিশ্চিতকরণ প্রক্রিয়ায় টেকসই উন্নয়ন অভীষ্ট (এসডিজি) কাঠামোকে অবলম্বন করে সরকারের অগ্রসর হওয়া উচিত বলেও মত দিয়েছে এসডিজি বাস্তবায়নে নাগরিক প্ল্যাটফর্ম। আলোচনায় অংশ নিয়ে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, ‘প্রস্তাবিত বাজেটে কালো টাকা সাদা করার যে সুযোগ দেওয়া হয়েছে তাতে তেমন সুফল মিলছে না। আর প্রস্তাবিত বাজেটে স্বাস্থ্য খাতে যে টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে তা অপ্রতুল। এটি বাড়ানো উচিত।’ এ ছাড়া করোনা মোকাবেলায় ১০ হাজার কোটি টাকার যে থোক বরাদ্দ রাখা হয়েছে, তার সমালোচনা করে তিনি বলেন, ‘আমাদের এখানে থোক বরাদ্দ মানেই অনিয়ম আর দুর্নীতি।’

সিপিডির সম্মানীয় ফেলো ড. মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, ‘করোনাভাইরাসের প্রভাবে জাতিসংঘ ঘোষিত এসডিজি বাস্তবায়ন কঠিন হয়ে গেল। কারণ এসডিজির ১৭টি অভীষ্ট বাস্তবায়নে যে পরিমাণ টাকা বরাদ্দ দেওয়া দরকার ছিল, তা দেওয়া যায়নি। করোনার কারণে রাজস্ব আদায়ের হার কমে গেছে। রাজস্ব আদায়ের হার এখনো মোট জিডিপির মাত্র ১০ শতাংশের মধ্যে। ফলে এসডিজি-বিষয়ক অনেক খাতে কাঙ্ক্ষিত টাকা দেওয়া সম্ভব হয়নি।’

সংলাপে বিশেষ অতিথি হিসেবে যোগ দেওয়া পরিকল্পনা কমিশনের সাধারণ অর্থনীতি বিভাগের সদস্য (সিনিয়র সচিব) ড. শামসুল আলম বলেন, ‘চলমান মহামারি থেকে অর্থনীতি পুনরুদ্ধারের ক্ষেত্রে সরকার একটি স্বল্পমেয়াদি কার্যক্রম হাতে নেবে। অষ্টম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনাসহ সরকারের সব উন্নয়ন কার্যক্রমেই ঝুঁকিতে থাকা দেশের সব নাগরিকের সহযোগিতা দেওয়ার বিষয়টি বিবেচনায় থাকবে।’

এসডিজি প্ল্যাটফর্মের আহ্বায়ক এবং সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) সম্মানীয় ফেলো ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য সংলাপে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন। তিনি বলেন, ‘একটি বিস্তারিত কর্মপরিকল্পনা গ্রহণ করে পর্যায়ক্রমে পর্যবেক্ষণের মাধ্যমে চলমান সংকট থেকে পুনরুদ্ধারের কার্যক্রম গ্রহণ জরুরি। অতিমারির ফলে সৃষ্ট নতুন চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় দেশের অষ্টম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনায় এসডিজি কাঠামোকে বিশেষভাবে সন্নিবদ্ধ করা প্রয়োজন। এ ক্ষেত্রে দেশের পিছিয়ে পড়া ও প্রান্তিক জনগোষ্ঠীকে সহযোগিতার আওতায় আনার ক্ষেত্রে বিশেষ নজর দেওয়া জরুরি।’

চলমান অতিমারিতে নারী, শিশু, বয়স্ক জনগোষ্ঠী, প্রতিবন্ধী জনগোষ্ঠী, আদিবাসী, প্রত্যন্ত অঞ্চলের জনগোষ্ঠী, যুবসমাজসহ সমাজের পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীর বিভিন্ন চ্যালেঞ্জ নিয়ে এ সংলাপে আলোচনা হয়। সংলাপে ঢাকা, চট্টগ্রাম, সিলেট, খুলনা, বরগুনা, সুনামগঞ্জ, ঠাকুরগাঁও, বগুড়াসহ দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে উন্নয়ন কর্মী-বিশেষজ্ঞ, অর্থনীতিবিদ, গবেষক, ব্যবসায়ী প্রতিনিধি, যুব প্রতিনিধি এবং সাংবাদিকরা অংশগ্রহণ করেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

scroll to top