সামনে ইলিশ মৌসুম, নৌকা তৈরিতে ব্যস্ত কারিগররা

sirajuddulla-pic-2-scaled.jpg

এ,কে,এম ইব্রাহিম খলিল উল্যাহ ও জি,এম, সিরাজ উদ দৌলা হাতিয়া থেকে ফিরেঃ

ইলিশ মৌসুমকে ঘিরে নোয়াখালী দ্বীপ হাতিয়া উপকূলে মাছ ধরার নৌকা তৈরির হিড়িক পড়েছে। ইতোমধ্যে কয়েকশ নৌকা তৈরি করা হয়েছে। এসব নৌকায় ইঞ্জিন বসানোসহ রংয়ের কাজ চলছে পুরোদমে। আষাঢ়ের অবিরাম বর্ষায় সামনের দিন ইলিশের ভরা মৌসুম। তাই এ মুহুর্তে জেলেদের প্রস্তুতিও ব্যাপক। এসময়টাতে নৌকা তৈরির কারিগরদের মুখে একটু হাসির ছোঁয়া দেখা যায়।
নোয়াখালীর উপকূলীয় এলাকার বিভিন্ন স্থান ঘুরে দেখা যায়, দ্বীপ উপজেলা হাতিয়ার বাংলাবাজার, নলচিরা, সূর্যমুখী, কাজির বাজার, জাহাজমারা রাস্তার চর, তমরুদ্দীন আজমার খাল, সুখচর চেয়ারম্যান বাজার, চান্দালী ঘাট ও বগুলার খাল এবং নঙ্গলীয়া খালের আশপাশে নৌকার কারিগররা ব্যস্ত সময় পার করছে। জানা যায়, প্রতিবছর ইলিশ মৌসুম সামনে রেখে উপকূলীয় অঞ্চলে নদী বা সাগর পাড়ে নৌকা তৈরি বা মেরামতের হিড়িক পড়ে যায়। এ বছরও তার ব্যতিক্রম ঘটেনি। জোরেশোরে চলছে নৌকা তৈরির কাজ। স্থানীয় নৌকা প্র¯‘তকারী আব্দুর রশিদ কাঠমিস্ত্রিদের অব¯’া সম্পর্কে জানান, এ বছর কাঠের দাম একটু বেশি। অন্যান্য বছরের তুলনায় এ বছর নৌকা কম তৈরি হ”েছ। তারপরেও মিস্ত্রিরা নৌকা তৈরি করছে মনোযোগ সহকারে। তাছাড়া দেশে করোনা ভাইরাস সংক্রমণের কারণে অনেক মিস্ত্রি কাজে আসতে চাইছে না। সবাই এখন ঘরে থাকতে চাইছে। তারপরেও যারা এসেছে সকলে অর্থনৈতিক টানাপড়নের কারনে এখানে আসা। দীর্ঘদিন লকডাউন থাকাতে মানুষের আয় কমে গেছে। কর্মসং¯’ানের উপর পড়েছে ভাটা। যা সঞ্চয় ছিলো তাও ভেঙ্গে ভেঙ্গে খাওয়া হয়েছে। বাকি দোকানে অনেক টাকা দেনা । বিভিন্ন এনজিও সমিতি থেকে নেওয়া হয়েছে বড় মাঝারি অংকের ঋণ। সরেজমিন ঘুরে উপজেলার বিভিন্ন  স্থানে নৌকা তৈরি ও মেরামতের দৃশ্য চোখে পড়েছে। আর কাঠমিস্ত্রিদের পাশাপাশি নৌকার মালিকরা নৌকা তৈরির উপকরণ সংগ্রহে ব্যস্ত হয়ে পড়েছেন। চর নঙ্গলীয়ার ¯’ানীয় বাসিন্দা আব্দুল মোতালেব বলেন, উপকূলের প্রায় অধিকাংশ মানুষই মৎস্যজীবী। এরা সাগরে মৎস্য আহরণ করে জীবিকা নির্বাহ করেন। উপকূলের মানুষের জীবন-জীবিকার সাথে নৌকা জড়িত। এজন্য ইলিশ মৌসুম আসার আগেভাগে নৌকা তৈরি ও পুরাতন নৌকা মেরামত করেন। একটি নৌকা তৈরি করতে খরচ পড়ে প্রায় ২ থেকে ৩ লাখ। আর বড় ট্রলার হলে কমপক্ষে ৮-১০ লাখ টাকা খরচ পড়ে।
স্থানীয় নৌকার কারিগর (কাঠমিস্ত্রি) কাজল জানান, ছোট-বড় নৌকা তৈরিতে বিভিন্ন প্রজাতির গাছের কাঠ ব্যবহার করা হয়। বিশেষ করে গর্জন, মেহগুনী, আকাশি, কড়ই বা শিলকড়ই গাছের কাঠ বেশি ব্যবহার হয়। তিনি আরো জানান, এই উপজেলায় প্রায় কয়েক শতাধিক কাঠমিস্ত্রি ও হেলপার রয়েছেন। প্রতি বছর এ সময় কাজের চাপ বেড়ে যায়। একটি নৌকা তৈরি করতে এক থেকে দেড় মাস সময় লাগে। নৌকার আকার ও প্রকার ভেদে মজুরি নেওয়া হয়। তবে করোনার কারনে পূর্বের তুলনায় মজুরি এখন কম পাচ্ছি। নৌকার মালিকরা মজুরি কমিয়ে দিয়েছে। নিরুপায় হয়ে কাজ করতে হচ্ছে।
এদিকে নাম প্রকাশে অনিচছুক ২নং চানন্দীর স্থানীয় বাসিন্দা ও নৌকার কারিগর জানান, করোনার ভয়াবহতা এখন উপকূলীয় অঞ্চলে আঘাত হানছে। প্রতিনিয়ত করোনার ভয়। দীর্ঘদিন কাজে যেতে পারিনি। অভাবের সংসার তাই বের না হয়েও পারছি না। স্থানীয় চেয়ারম্যান মেম্বার কোন সুযোগ সুবিধা দেয়নি। কিছু ত্রাণের আশ্বাস দিয়েও তা আর আমাদের কপালে জুটলো না। ভোটার আইডি কার্ড ফটোকপি করে নিয়েছে অথচ ত্রাণের কোন খবর নেই।

এ ব্যাপারে স্থানীয় চেয়ারম্যানের সাথে মুঠোফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তাঁর মুঠোফোনটি বন্ধ পাওয়া যায়।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

scroll to top